binodonerpadmaful
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

যে কারণে খালেদা জিয়া ‘আপোষহীন নেত্রী’


বিনোদনের পদ্মফুল | ইমরান মাহমুদ নভেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম যে কারণে খালেদা জিয়া ‘আপোষহীন নেত্রী’

বেগম খালেদা জিয়া, যাকে বাংলাদেশের মানুষ ‘আপোষহীন নেত্রী’র খেতাব দিয়েছে। কিন্তু কেন তাঁকে এই উপাধী দেয়া হলো তা হয়ত জানে না এখনকার প্রজন্ম। জানার কথাও না। বিগত ১৬ বছরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিলো বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জিয়া পরিবারের ভূমিকা মুছে ফেলার। চলুন এক নজরে দেখে আসি কেন বেগম জিয়াকে বলা হয় আপোষহীন নেত্রী
প্রায় ৬ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং তিনি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। একই বছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর ক্ষমতা দখল করেন আরেক সেনা প্রধান, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরশাদের শাসন আমলে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সে সময়ে আওয়ামী লীগ ছিলো সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। ৮৬ সালে এরশাদ এক নির্বাচন আয়োজন করলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জামায়াত এরশাদের আয়োজিত ৮৬’র নির্বাচনে অংশ নেয়। আর সে সময় অনেকেই আওয়ামী লীগকে জাতীয় বেইমান বলেও আখ্যায়িত করেন।
অনেক সূত্র থেকে জানা যায় সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য শেখ হাসিনা তৎকালীন সরকার প্রধান থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ বা জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলো না। করলে হয়ত শেখ হাসিনার মতো বেগম জিয়াও মোটা অংকের টাকা পেতেন। সে সময় থেকেই তাঁকে নাম দেয়া হলো ‘আপোষহীন নেত্রী’। ৮৬’র নির্বাচনে অংশ না নিলেও খালেদা জিয়া তথা বিএনপির জনপ্রিয়তা উঠে গেল তুঙ্গে। ৯১ সালে এরশাদের পতন হলো। তত্ত্বাবধয়ক সরকারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন। ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল’, এমন বিশ্বাস থেকে শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে থেকেই মন্ত্রিসভা ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু জিতে গেলেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি। অনেক বিশ্লেষকের মতে ৮৬’র নির্বাচনে এরশাদের সাথে আপোষ না করার কারণেই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো বিএনপি।
৯৬’র নির্বাচন
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে পূর্ণ মেয়াদ শাসন করলেন বেগম খালেদা জিয়া। মেয়াদ শেষে তিনি দলীয় সরকারের অধীনেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন দিলেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে এটি ছিলো একটি রাজনৈতিক ভুল। একই ভুল ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাও করেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়া যখন দেখলেন এই নির্বাচনের পক্ষে জনগণের সমর্থন নেই, তখন তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে থাকলেন না, কোন আন্দোলনকারীর উপর গুলিও চালালেন না। তিনি তার ভুল সুধরে নিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচন দিলেন।
২০১৪’র নির্বাচন
২০০৯ সালের বিডিয়ার হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনা, এসব নিয়ে ১৪’র নির্বাচনের আগে অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তাই তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেন না, এমনকি এই প্রথাই বাতিল করে দিলেন। বেশ কিছু সূত্র থেকে জানা যায় সে সময়ে শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে ২০১৪ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিনিময়ে বেশ কিছু মন্ত্রণালয় দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এই বারও আপোষ করলেন না খালেদা জিয়া। ‘তত্ত্বাবধয়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন’ এই দাবিতে অনড় ছিলেন তিনি। ফলাফল বিএনপি ২০১৪ নির্বাচনও বর্জন করলো। ১৪’র একতরফা নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ জিতলো। সে সময়ে বেগম জিয়া বলেছিলেন, “আওয়ামীলীগকে আমাদের কিছু করতে হবে না। ওরা নিজেরাই একদিন পচবে। পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে।”
কারাবরণ
কোনভাবেই যখন শেখ হাসিনা বেগম জিয়ার সাথে আপোষ করতে পারলেন না, তখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁকে সাজা দেয়া হলো। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি তাঁকে ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও ২০১৬ সালের ২৯শে জুলাই পুরোনো কারাগারটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় এবং সব কয়েদীদের নবনির্মিত ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। অর্থাৎ, ২০১৮ তে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বেগম জিয়া ছাড়া আর কোন কয়েদী ছিলেন না। ৩৮ একর জায়গার উপর অবস্থিত এই কারাগারে একমাত্র বন্দী ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার সাথে সমঝোতায় আসলে হয়ত তাঁকে এমন কারাবাস করতে হতো না, মন্ত্রিত্ব ও সংসদে আসন পেয়ে আরামেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তবুও তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন।
২০১৮ ও ২০২৪ নির্বাচন
২০১৪ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আরও ২টি নির্বাচন হয়। ২০১৮ ও ২০২৪ সালে। যার কোনটিতেই অংশ নেয়নি বিএনপি। সে সময়ে অনেকে বলেছিলেন নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি হয়ত হারিয়ে যাবে। কিন্তু হলো ঠিক তার উলটা। ১৮ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থেকেও হারিয়ে যায়নি দলটি। হয়ত বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীনতার কারণে। অথচ ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলের কোন অস্তিত্বই নেই। ঠিক যেমনটি বলেছিলেন বেগম জিয়া, “নিজেরাই পচবে, নিজেরাই দুর্গন্ধ ছড়াবে।”
২০১৪ থেকে ২০২৪ প্রায় ১০ বছরের বেশি সময়ে বিভিন্নভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো বিএনপিকে। করা হয়েছিলো নানান অত্যাচার। এমনকি, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে সেনানিবাসে একটি বাসভবন দেয়া হয়েছিলো বেগম খালেদা জিয়াকে। কিন্তু ২০১০ সালে অনেকটা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাঁকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয় সেই বাসা থেকে। সেদিন তিনি অঝোড়ে কেঁদে বলেছিলেন, “আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম”। সেই বিচারই বোধহয় করেছেন মহান আল্লাহ। প্রায় ১৪ বছর পর সসম্মানে তাঁকে সেনানিবাসে আমন্ত্রণ জানানো হয় সামরিক বাহিনী দিবস ২০২৪’র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। হাস্যোজ্জ্বল মুখে প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য দলের নেতা ও ছাত্রদের সাথে কথাও বলতে দেখা গেছে তাঁকে। অসুস্থতা ও নানান শারীরিক জটিলতায় আগের মতো কি তিনি আরও একবার ফিরবেন রাজনীতিতে? এমন প্রশ্ন এখন জনমনে।

Side banner