binodonerpadmaful
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে নারীদের গুরুত্ব অপরিহার্য 


বিনোদনের পদ্মফুল | শাহিন নুরী নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে নারীদের গুরুত্ব অপরিহার্য 

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে নারীর গুরুত্ব অপরসীম। নারী শব্দটা দুটি বর্ণ দ্বারা একত্রিত হলে ও এই শব্দটার গুরুত্ব সমাজ ব্যবস্থাপনায় অনস্বীকার্য। আধুনিক সভ্যতাসহ বিগত দিনে যে সভ্যতায় এখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নারী। 
নারী সভ্যতার সমাজে কারো মা, বোন, দাদী, নানি, খালা, ফুফু, চাচি সম্পর্কে জড়িত। এই নারী আবার পুরুষের সবচেয়ে কাছের জীবন সঙ্গী স্ত্রী তথা সহধর্মিনী হিসেবে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেয় তার সঙ্গী পুরুষের সঙ্গে। সভ্যতার আধুনিক যুগে এসে নারীরা শুধু ঘরে বন্দীশালায় থেকে সমাজে বড় ভূমিকা রাখেনি বরং এই বন্দিশালা থেকে বের হয়ে এসে সমাজের প্রত্যেকটি সমস্যায় হাতে হাত রেখে পাশে দাঁড়িয়েছে পুরুষের। অপরিহার্য অবদান রেখে চলছে সমাজে। 
জীবন জীবিকা অন্বেষণে নারীরা পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে  শিক্ষকতা পেশা,  পোশাক খাত ছাড়াও এখন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, যোগাযোগ খাত, রিয়েল স্টেট সেবা, টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংকিং, ইনস্যুরেন্স খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মোট পোশাক শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। পোশাক খাতের পরই প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।  
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য ও সকল শ্রেণীর নারীর আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত ইতিবাচক। এ ছাড়া দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল উৎপাদনে বাংলাদেশের উন্নয়নের নারীরাই মূল চাবিকাটি। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে যার মধ্যে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং এই ক্ষেত্রে এ দেশের নারী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের এবং সকল শ্রেণীর নারীদের আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নারীর সকল উৎপাদন বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীরাই মূল চাবিকাঠি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য গার্মেন্টস শিল্প, কৃষি ও গৃহস্থালি কর্মকান্ডে নারীদের অবদান ঐতিহাসিক। এ বিষয়ে সচেতনতা নারীর ক্ষমতায়নের পথ অগ্রসর করবে। তৃণমূলের শক্তির সাথে নারী আন্দোলনের সংগঠকদের সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে এদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধের মতো অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করা সম্ভব। এছাড়া মেয়েদের বিয়ের বয়স আঠারোর কম হওয়া উচিত নয়। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে এবং এভাবেই পরিবারে, সমাজে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে হবে। তবেই কেবল সমাজে নারীরা উন্নতি লাভ করবে। সমাজের জন্য নারী-পুরুষের সমান অবদান প্রয়োজন। 
আমাদের দেশে নারীদের প্রতি বৈষম্যের বহুমুখী বিষয় বিদ্যমান। রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক বিভাজনের বাইরে গিয়ে নারী হিসেবে একটি বৃহৎ ঐক্য তৈরি করে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইনসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিদ্যমান বৈষম্যগুলোর বিরুদ্ধে সমাধানের পথ সৃষ্টি করতে হবে। 
নারী ব্যবসায়ী, নারী আইনজীবী, নারী পেশাজীবী-ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, শ্রমিক ও অন্যান্য, নারী উন্নয়ন কর্মী সকলেরই নারীস্বার্থকে ভিত্তি করে একটি সমন্বিত  অংশগ্রহণ করতে হবে। যাতে নারীর অবদানগুলো মূল্যায়িত হয় এবং নারীর মানবাধিকার ও ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সফল হতে পারে। এ লক্ষ্যে নারী আন্দোলনকে সমাজের অন্যান্য শক্তিসমূহের সঙ্গে এবং পাশাপাশি মিডিয়ার সাথে একটি প্রফেশনাল সম্পর্ক দক্ষতার সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে। 
নারীর উন্নয়নে রাষ্ট্র এবং নাগরিক সমাজের ভূমিকা চিহ্নিত করা এবং একই সঙ্গে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা মোকাবেলার উপায় নির্ধারণ করতে হবে। নানান প্রতিকূলতা ও গভীর চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান নারী শ্রমশক্তি, যার মধ্যে আছে কৃষক নারী, পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী, চ্যালেঞ্জিং পেশাসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত পেশাজীবী নারী, শ্রমিক নারী যারা আগামী দিনের সমৃদ্ধ অর্থনীতির অন্যতম অংশীদার। 
এছাড়া বিনা পারিশ্রমিকে যারা গৃহস্থালির কাজ বা সেবাদানের কাজ করছেন দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানের বিষয়টিও আজ জাতীয় ও বিশ্বপরিসরে স্বীকৃতির দাবিদার। নারীরা তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ও ধারাবাহিক নারী আন্দোলনের ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক নারী-পুরুষ বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন নতুন কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে চলছে। আগামী পাঁচ বছরের কর্ম-পরিকল্পনা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে যা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের নারীদের সাহস ও সমর্থন যোগাবে। আধুনিক সভ্যতার নারীরা কিছুটা পিছিয়ে আছে বিবাহ হয়ে গেলে নারীদের স্বামীর বাড়ি হয় আসল বাড়ি সেখানে তাদের শ্বশুর শাশুড়ি যদি তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করে বৌমাকে বৌমা হিসেবে না দেখে তাদের কলিজার টুকরা মেয়ের মত করে  দেখে তাহলে সমাজে আসবে আরো পরিবর্তন। সমাজ হবে একটি গতিশীল আধুনিক সভ্য সমাজ। নারী পাবে তার অনুপ্রেরণার জায়গা ফিরে পাবে তার শশুর শাশুড়ির জায়গায় যোগ্য  পিতা ও যোগ্য মাতা। 
নারী কে আধুনিক সভ্যতার আর প্রতিহিংসার আদলে নয়, তাদেরকে দেখতে হবে সমাজের অগ্রগামী ভূমিকার অংশীদার হিসাবে। সমাজ পাবে একটি বৈষম্যহীন সমাজ যেখানে আগামী প্রজন্ম হবে একটি সুন্দর সাবলীল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের নাগরিকরা হবে স্মার্ট সমৃদ্ধশালী নাগরিক। প্রত্যেকটি পেশায় নারীকে সম্মান দিতে হবে, অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। অনুপ্রেরণায় পারে  নারীকে  উজ্জীবিত করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে।

Side banner