binodonerpadmaful
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

শিশুদের তাদের মেধায় গড়তে হবে


বিনোদনের পদ্মফুল | শাহিন নুরী নভেম্বর ১২, ২০২৪, ১২:১১ পিএম শিশুদের তাদের মেধায় গড়তে হবে

আজকের শিশু আগামীদিনে কোন মেধায় মেধাবী হবে তা আমরা কিভাবে বুঝবো তা কেউ বলতে পারি না। আজকের নুতুন প্রজন্মের শিশুকে বলা হয় আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুর আনন্দ ও ইচ্ছার মাঝেই শিশুর শিক্ষা জীবনের অবস্থান। কঠোর শাসন, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিকূল পরিবেশ, শিশুর শিক্ষা জীবনকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিচ্ছে না তো। শিশুর মনের আনন্দই তার দেহ মনের দৃঢ় শক্তির মূল উৎস। আনন্দ ও শিশু বান্ধব সুস্থ্য পরিবেশ ছাড়া তার সুন্দর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সম্ভব না। আজকের শিশু অনেকেই হবে খেলোয়াড়, সংগীত শিল্পী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যারিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রশাসক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, মানুষ গড়ার  কারিগর শিক্ষক শিক্ষিকা, কবি সাহিত্যিক, লেখক, কলামিস্ট, সাংবাদিক, গানের গীতিকার ও সুরকার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ঠিকাদার  ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার মেধাবী মানুষ।
শিক্ষা বলতে বর্তমান সময়ে পিতা মাতা সহ সমাজের সুধীমহল মনে করছেন শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করা বা শাসন করা। শিশুকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে যে বিদ্যা শিক্ষা আমাদের সমাজের  পদ্ধতি তে প্রবেশ করেছে তা আমাদের দেশ তথা এশিয়া মহাদেশেও এখন প্রচলিত হচ্ছে, এই শিক্ষাকে শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত মোটেও ঠিক হবে না। বর্তমানে আধুনিক শিক্ষাবিদরা এ ধরনের শিক্ষাকে সংকীর্ণ শিক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইডুকেয়ার- শব্দের অর্থ লালন করা, পরিচর্যা করা, প্রতিপালন করা। অর্থাৎ শিশুকে আদর যত্নের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য সক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার নামই হলো শিক্ষা।
শিশুর ওপর জোর করে বিদ্যা চাপিয়ে দেয়ার নাম শিক্ষা নয়।
শিশুর গ্রহণ উপযোগী ও আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দানই হলো প্রকৃত শিক্ষা। প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো শিশুর বিকাশে শিক্ষার কথা বলেছেন  তা হল- “শিক্ষা হলো শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত আত্মবিকাশ”।
কিন্তু পারিপার্শিক পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থাই গঠন করে দিচ্ছে শিশুর আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যার ফলে  সেই পরিবেশের দাবী অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে শিশুর জীবন। শিশু শিক্ষা বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ থমসন বলেন, “শিক্ষা হলো শিশুর ওপর পরিবেশের প্রভাব, যে প্রভাবের দ্বারা শিশুর বাহ্যিক আচরণ, চিন্তাধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গির স্থায়ী পরিবর্তন হয়”।
তাই শিশুর সামর্থ্য ও শক্তিগুলোর স্বাভাবিক ও সুষম বিকাশই শিক্ষার লক্ষ্য। জন্মের পর শিশু থাকে নিষ্পাপ, পবিত্র। শিশুর অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলো পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনই প্রধান কাজ।
শিশুরা হয় কোমল মনের অধিকারী। আনন্দঘন পরিবেশে থাকতেই শিশুরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। শিশু শিক্ষা ও আনন্দ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। শাসন, নিয়ন্ত্রণ, ভীতিকর ও বিষাদময় পরিবেশ শিশুর শিক্ষা লাভকে বাধাগ্রস্ত করে। আনন্দ ছাড়া কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা লাভে উৎসাহিত হবে না।
উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই শিশুর মানসিক ভ্রুণ বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। শিশুরা শিখবে আনন্দের মাধ্যমে, নিজেদের ইচ্ছামতো,খেলাধুলার মাধ্যমে, মনের অজান্তে। প্রকৃতির সাথে সংযোগ রেখে মনের চর্চা হতে থাকবে, শ্রেণিকক্ষের চারদেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে নয়। শিশুরা শিখবে সেই পরিবেশ বেষ্টিত বিদ্যালয়, পরিবার ও সমাজ থেকে, নিজেদের মতো করে। জানবে সহজভাবে, আনন্দের সাথে। শিশু আনন্দ ছাড়া বিদ্যা অর্জনে আগ্রহী হয় না। তার মাঝেই লুকিয়ে থাকবে তার শিক্ষা ও মেধাবিকাশের প্রকাশ।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার চিন্তা ধারায় বলেছেন- আনন্দহীন শিক্ষা, শিক্ষা নয়, যে শিক্ষায় আনন্দ নেই, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না। আনন্দহীন শিক্ষায় সেই কথিত শিক্ষকের কুট দৃষ্টি আর কুট বাক্য ছাড়া আর কিছু নেই।
শিশুর মেধা বান্ধব পরিবেশ: বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন শিশু শিক্ষার একজন নিপুন কারিগর, যিনি গঠন করবেন শিশুর মানবত্মা। তিনি জাতি গঠনের সর্বশ্রেষ্ঠ কারিগর। একজন শিক্ষকই পারেন শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করতে। যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক ছাড়া এ কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব। শিক্ষককে হতে হবে আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তাঁর থাকতে হবে চরম ধৈর্য ও শিশু শিক্ষার প্রতি আগ্রহী মনোভাব, হতে হবে শিশু মনোবিজ্ঞানী। শিক্ষক একাধারে হবেন, শিক্ষাগুরু, পিতা-মাতা ও নির্ভরযোগ্য অভিভাবক। কোনো শিশু যদি শিক্ষককে ভয় পায় তা হলে সে শিক্ষক শিশু শিক্ষা দানে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে বিপরীতে শিশুর মেধার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত সৃষ্টি করবে।
একজন আদর্শ শিক্ষকের হবে শিশুর বন্ধু। শিশুর মনের ভীতি দূর করে সৃজনশীল কাজে তাদের সহায়তা করবে। শিশুরা সবসময় গতিবদ্ধ জীবন হতে বেরিয়ে আসতে চায়, বাঁধার প্রাচীর ভাঙতে চায় , উন্মুক্ত নীল আকাশের নিচে উন্মুক্ত জীবন।
শিশুরা ছুটতে চায় নিজের মতো করে। শিক্ষকের মূল কাজ হচ্ছে শিশুর মাঝে মুক্ত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া। শেখার পরিবেশে নতুনত্ব আনতে হবে, গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে বৈচিত্র্যময় ধারার প্রবর্তন আনতে হবে। বন্ধুর মতো তাদের সাথে মিশে যেতে হবে, অনায়াসে প্রশ্ন করার এবং মনের ভাব প্রকাশের জন্য সুযোগ দিতে হবে।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল ফজল বলেছেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির প্রাণশক্তি তৈরির কারখানা আর রাষ্ট্র ও সমাজ দেহের সবচাহিদার সরবরাহ কেন্দ্র”। এইসব স্থলে ত্রুটিপূর্ণ হলে শিশু থেকে সুস্থ মানসিকতার মানুষ পাওয়া বড়ই দুর্লভ হয়ে পরে।
পরিবার হলো প্রাথমিক এবং মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান : শিশু প্রথম শিক্ষা লাভ করে তার পরিবার থেকে। তাই শিশুবান্ধব পরিবেশে শিক্ষার ব্যাপারে পিতা-মাতা, ভাইবোন ও অন্যান্য বড়দের ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবারে থাকতে হবে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ এবং বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। শিশু মনে দাগ কাটতে পারে এমন অশোভন আচরণ থেকে পরিবারের সকল সদস্যদের বিরত থাকতে হবে।পরিবারের সদস্যদের প্রতি মুহূর্তে খেলার ছলে শিশুকে নতুন করে শেখাতে হবে, শিশুকে কখনো বাধার বলয়ে রাখা যাবে না।
সামাজিক পরিবেশ দ্বারা শিশু মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয় : সুস্থ, সুন্দর সামাজিক পরিবেশ শিশুর মেধা ও মননশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। সমাজ হতে হবে শিশুর শিক্ষা উপযোগী। শিশুর বিদ্যালয়ে যাতায়তসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সমাজের। শিশুর চিত্তবিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, ক্লাব, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে দিবে। বৃত্তিমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের সামাজিকভাবে উৎসাহিত করা, সমাজ থেকে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে শিশুর জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা, চিকিৎসার  সু-ব্যবস্থা। প্রতিটি শিশুর শিক্ষা, বেড়ে উঠা, আচরণসহ সকল বিষয়ে সমাজের মানুষকে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
শিশুবান্ধব পরিবেশ হীনতায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে পরিবার, সমাজ ও সর্বপরি রাষ্ট্রে সমাজ বিরোধী, অনৈতিক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এই পরিবেশে বড় হওয়া অধিকাংশ শিশু। শিক্ষিত ও সু-নাগরিক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র। শিশুর মেধাবিকাশে শুধু বড় হয়ে সে সরকারী একটা চাকরি করবে এ প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তাকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে, কিন্তু অবশ্যই সুপরিবেশের মধ্য দিয়ে তাহলে আমাদের দেশসহ এশিয়া মহাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে উঠবে আদর্শ নাগরিক হিসেবে। সমাজ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে আধুনিক সভ্যতায় আরো আধুনিক  সেক্টরের মেধাবী মানুষ হিসেবে।

Side banner