binodonerpadmaful
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

পলিথিন বর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে 


বিনোদনের পদ্মফুল | শাহিন নুরী নভেম্বর ২, ২০২৪, ০১:১৪ পিএম পলিথিন বর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে 

আধুনিক সভ্যতার পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় প্রত্যেকটি দেশে নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে ও তার বাহিরে নয়। বাংলাদেশ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে আইন কার্যকর করতে অন্তর্বতী সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় পদক্ষেপও এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বাংলাদেশে ২০০২ সালে থেকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন করে শুরুতে সেটা কার্যকর  হলে ও পরবর্তীতে সেটা অকার্যকরই হয়ে যায়। অন্তর্বতী কালীন  সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ১ অক্টোবর থেকে শপিং মলে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিয়েছে। উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে ৩ নভেম্বর থেকে অভিযান চালানো হবে বলেও জানানো হয়েছে। এই অভিযানে শিক্ষার্থীরাও সম্পৃক্ত থাকবে বলে জানা গেছে। পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিন বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, এর জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি, ২২ বছর পর হলেও আইনটি কার্যতই বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হবে এবং এর সুফল আমরা ভোগ করব।
পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বছরের পর বছর পলিথিন বা পলিপ্রোপাইলিন শপিংব্যাগ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২২ বছরেও আইনটি কেন কার্যকর করা গেল না, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পলিথিনের ব্যবহার আরও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা জানি, বিশ্বে সমসাময়িক অনেকগুলো পরিবেশগত সমস্যা বিদ্যমান এবং এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ। জার্মানির একটি সংস্থা তাদের গবেষণায় জানিয়েছে, প্লাস্টিক উৎপাদন এই শতাব্দীর শুরুতে যা ছিল তা থেকে দ্বিগুণ হয়ে ২০২১ সালে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মেট্রিক টনে গিয়ে ঠেকেছে। দেশে যখন পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন হয়, তখন তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের কড়াকড়ি এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সচেতনতামূলক উদ্যোগের ফলে এর ব্যবহার অনেক হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু একপর্যায়ে ওই কার্যক্রমে শিথিলতা দেখা দিলে পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোয় আবার ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। ফলে দেশজুড়ে পলিথিনের আবারও বিস্তার ঘটে। আমরা দেখছি, নগরে-শহরে-গ্রামে সর্বত্র পলিথিন পরিবেশ জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরে -নগরে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে পলিথিন ও পলিথিন জাতীয় পদার্থ।
পলিথিন  জনসাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তো বটেই, একই সঙ্গে পলিথিনের বহুমাত্রিক ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশ ও মানবজীবনের জন্য ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলি প্রোফাইলিং শপিংব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন এবং ব্যবহার বন্ধের কার্যক্রম বাস্তবায়নে অন্তর্র্বতী সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। পর্যায়ক্রমে স্বল্প সময়ের মধ্যে শপিং মল থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার পর্যন্ত অবৈধ পলিথিন শপিংব্যাগ বর্জনের ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বিশেষ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে পারে। সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণ তো বটেই, ব্যবসায়ীদেরও এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। তবে একই সঙ্গে সুপারশপ থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থার পথ সুগম করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সচেতনতা জরুরী।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত কোনো কোনো পণ্যের আয়ুষ্কাল গড়ে ১০ বছর হলেও উৎপাদন এবং গঠনজনিত কারণে তা পচতে কখনও কখনও এর ১০০গুণ বেশি সময় লাগতে পারে। জাতিসংঘের পরিবেশ প্রকল্প এর তথ্যমতে, উৎপাদিত ও ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মাত্র ২২-৪৩ শতাংশ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হয়, বাকি সব চলে যায় নদী-খাল, সমুদ্রসহ নানা খোলা জায়গায়। আমাদের প্রেক্ষাপটে এই চিত্র আরও ভয়ংকর। আমরা দেখছি, ব্যবহৃত পলিথিন বা ওয়ান টাইম প্লাস্টিকজাত পণ্য যত্রতত্র ফেলার ফলে নগরে-শহরে এর ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব দেখা যায়, বিশেষত বৃষ্টিপাতের পর। জলাবদ্ধতা তখন মানুষের জন্য দুর্ভোগের আরও একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, দেশে প্রায় ৩ হাজার কারখানায় দিনে দেড় কোটি প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। পণ্যটির উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে আইন প্রণয়ন সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন পলিথিন ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিকসামগ্রী ব্যবহার করছে। তাতে সহজেই প্রতীয়মান এক্ষেত্রে জনসচেতনতার ঘাটতি কত প্রকট। 
আমরা মনে করি, আমাদের একসময়ের সোনালি আঁশ অর্থাৎ পাটের উৎপাদন বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাড়ানোর জোরদার প্রয়াস চালানো যেতে পারে। পাটজাত ব্যাগ বা থলের পাশাপাশি পলিথিনের মতো ব্যবহার করা যায় এমন সামগ্রী উৎপাদন করলে মানুষের মধ্যে এর ব্যবহারে আগ্রহ বাড়বে। পলিথিন বা ওয়ান টাইম প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহারে শুধু অভিযান চালালেই হবে না, মানুষ যাতে এর বিকল্প কিছু ব্যবহার করতে পারে এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এই পণ্যগুলোর দামও সাশ্রয়ী করতে হবে। পলিথিনের দাম সাশ্রয়ী বিধায় মানুষ এর ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। তবে জনপরিসরে অধিকতর সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালালে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিসহ অন্যান্য ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষের ভ্রম ভাঙবে বলে আমরা আশা করি। 
আমরা আশা করি, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত হলে এর সুফল প্রত্যাশিতভাবে দৃশ্যমান হবে। আমাদের দেশে আইন প্রণয়নে যত তোড়জোড় দেখা যায়, এর বাস্তবায়নে ততটা কিছু দেখা যায় না। পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের আইন প্রণয়নের পরও কীভাবে উৎপাদনকারী কারখানার সংখ্যা বাড়ল, এটি নিশ্চয়ই জরুরি প্রশ্ন। আমাদের প্রত্যাশা, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আইনটি কার্যকরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন সফল হবে। কারণ রাজনৈতিক চাপমুক্ত পরিবেশে প্রশাসন যদি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে, তাহলে এর সুফল কতটা সর্বব্যাপী হতে পারে এই অভিজ্ঞতাও আমাদের সামনে রয়েছে। বিলম্বে হলেও সরকারের উদ্যোগ সফল হোক। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের  কয়েকটি জেলার মানুষের সঙ্গে কথা হলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ পলিথিন বর্জনে ঐক্যমত পোষণ করে।

Side banner