বৃহস্পতি গ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা সম্প্রতি পাল্টে গেল পেশাদার ও সৌখিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তথ্য নিয়ে একসঙ্গে করা এক গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহটির মেঘ সম্পর্কে তাদের আগের ধারণা সঠিক নয়।
আগের ধারণা ছিল, ‘অ্যামোনিয়া’ বরফে তৈরি বৃহস্পতির মেঘ। তবে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকাশনা ‘জার্নাল অফ জিওফিজিক্যাল রিসার্চ’-এ প্রকাশ পাওয়া নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, গ্রহটির এসব বরফের মেঘ আসলে তৈরি হতে পারে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোসালফাইড ও ধোঁয়াশা দিয়ে।
এ গবেষণার জন্য চিলিতে অবস্থিত ‘ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি’র ‘ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ’-এর ‘মাল্টি ইউনিট স্পেকট্রোস্কোপিক এক্সপ্লোরার বা মিউজ’ যন্ত্রের তথ্য ব্যবহার করেছে গবেষণা দলটি। মিউজ-এর মধ্যে থেকে বের হওয়া আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে বৃহস্পতির এসব গ্যাসে থাকা বিভিন্ন যৌগ নির্ধারণ করতে স্পেকট্রোস্কোপিক বিশ্লেষণ ব্যবহার করেছে দলটি।
কম্পিউটার সিমুলেশনে দেখা গেছে, বরফের মেঘের বাইরের স্তরটি আগের ধারণার চেয়েও গভীর হওয়ার কথা। যার মানে হচ্ছে, গ্রহটির উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রার অঞ্চলে রয়েছে এসব মেঘ, যেটি বিশুদ্ধ অ্যামোনিয়ার কারণে এতো উষ্ণ হওয়ার কথা নয়।
মিউজ-এর আগের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণেও এসব ফলাফলের ইঙ্গিত মিলেছিল। তবে টেলিস্কোপটি অনেক জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করায় এটি প্রমাণের বিষয়টি ওই সময় কঠিন হয়ে ওঠে।
এ নতুন গবেষণাটি অনেক সহজ মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস।
“এত সহজ পদ্ধতি গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের এত গভীরে অনুসন্ধান চালাতে পেরেছে দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। একইসঙ্গে স্পষ্টভাবে এটি প্রমাণ করেছে, বৃহস্পতির এসব মেঘ বিশুদ্ধ অ্যামোনিয়ার বরফ হতে পারে না!” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্যাট্রিক আরউইন।
“আমাদের গবেষণার ফলাফলে ইঙ্গিত মিলেছে, আধুনিক ক্যামেরা ও বিশেষ ফিল্টার ব্যবহার করে একজন সৌখিন গবেষকের কাজ বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে এক নতুন জানালা খুলে দিতে পারে। গ্রহটির রহস্যময় মেঘের প্রকৃতি ও বায়ুমণ্ডল কীভাবে সঞ্চালিত হয় তা বোঝার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে তার এই অবদান।”
এ গবেষণার সহ-লেখক স্টিভেন হিল। শখের গবেষক হলেও তার পিএইচডি রয়েছে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে। সেইসঙ্গে তিনি মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার কাজও করেন। তিনি বলেছেন, “অপেশাদারদের জন্য পেশাদার কাজে অবদান রাখার নতুন উপায় খুঁজে বের করার বিষয়ে আমি আশাবাদী। তবে এ প্রকল্পে এমন সাফল্য আমি একেবারেই আশা করিনি!”
আপনার মতামত লিখুন :