সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আগামি ২৯ মে বুধবার ভোট গ্রহণ। ইতোমধ্যে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ আর দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা উপজেলা। এলাকা ছেয়ে গেছে সাদাকালো পোস্টার আর রঙিন ব্যানারে। পক্ষে-বিপক্ষে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ততা বেড়েছে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের। বাস্তবায়ন হোক আর না হোক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন চমকপ্রদ নানান প্রত্যাশার কথা। প্রার্থী ও তাদের স্বজন, সমর্থকদের নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরছেন প্রতিপক্ষরা। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে উপজেলা নির্বাচনের দামামা।
এ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৩জন প্রার্থী, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন। তাদের প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগ ঘরণার।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দলটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য আমিনুল ইসলাম লাল্টু (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও কেঁড়াগাছি ইউপির সাবেক কয়েকবারের চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন লাল্টু (আনারস প্রতীক) ও আনারুল ইসলাম (মোটরসাইকেল প্রতীক)। স্থানীয় মানুষের কাছে এস এম আলতাফ হোসেন লাল্টু পরিচিত ‘বড় লাল্টু’ নামে আর বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু ‘ছোট লাল্টু’ নামে পরিচিত।
চেয়ারম্যান পদে দুই লাল্টুর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দৃশ্যমানভাবেই দুই লাল্টুর পক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। যেই জিতুক তাদের ভোটের ব্যবধান কম থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা।
সাধারণ ভোটাররা রহস্য করে বলছেন, নিশ্চিত ভাবে বলা যায় লাল্টু উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। তবে কোন লাল্টু সেটা ২৯ তারিখে সন্ধ্যায় জানা যাবে।’
তারা আরো জানান, ‘ভোটের ফলাফলের ফ্যাক্টর হতে পারে জামাত-বিএনপি ঘরণার ভোটারদের রায়। দল দুটি কেন্দ্রীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় পর্যায়ে উৎসুক কিছু কর্মী সমর্থকরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারেন। যদি তেমনটা হয় তবে তাদের অধিকাংশ ভোট ছোট লাল্টুর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা। আর সত্যিকার অর্থে বিএনপি-জামাত ভোট বর্জন করে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটকেন্দ্রে না গেলে বড় লাল্টু বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
অপর প্রার্থী আনারুল অল্প সংখ্যক ভোট পেতে পারেন। সব ভোটকেন্দ্রের সকল বুথে তিনি এজেন্ট জোগাড় করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য, কলারোয়ার কয়লা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ ইমরান হোসেন (তালা প্রতীক), মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সেক্রেটারি মফিজুল ইসলাম লাভলু (উড়োজাহাজ প্রতীক), অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা, জামায়াত সমর্থক জাহিদুর রহমান খাঁন চৌধুরী (মাইক প্রতীক) ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আশিকুর রহমান মুন্না (বই প্রতীক)। তবে ব্যালটে থাকলেও মুন্না নির্বাচনের মাঠে নেই।
সাধারণ ভোটারদের ভাষ্যমতে- এই পদে শেখ ইমরান ও লাভলুর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে জাহিদ চৌধুরীও বেশ ভোট টানতে পারেন। এক্ষেত্রে জাহিদ চৌধুরী যত ভোট টানবেন সেটার অধিকাংশই ইমরানের সম্ভাব্যপ্রাপ্ত ভোট থেকে কমতে পারে। এমনটি হলে দৃশ্যমানভাবে শেখ ইমরানের জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকলেও লাভলু বিজয়ী হলে আশ্চর্যের কিছু হবে না বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহনাজ নাজনীন খুকু (হাঁস প্রতীক) ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা আ.লীগ নেত্রী সেলিনা আনোয়ার ময়না (কলস প্রতীক)। তাদের দু’জনের মধ্যেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছে দুটি পক্ষ। এক পক্ষে আছেন- এসএম আলতাফ হোসেন লাল্টু, শেখ ইমরান হোসেন ও শাহনাজ নাজনীন খুকু। অপর প্যানেলে আছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, মফিজুল ইসলাম লাভলু ও সেলিনা আনোয়ার ময়না।
এদিকে, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রকাশ্য গ্রুপিং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। একেক নেতা একেক দিকে। আবার তাদের একনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকরাও একেক দিকে। গ্রুপিং আর ব্যক্তিপন্থীর গ্যাড়াকলে পিষে বাধ্য হয়েও অনেক সাধারণ আওয়ামী ঘরণা ভোটাররাও দোদুল্যমান। স্থানীয় পর্যায়ে ম্যান টু ম্যান সম্পর্কের কারণেও ভাসমান অনেক ভোট এদিক-সেদিক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
অন্যদিকে, বিএনপি ও জামায়াতের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলীয় সিদ্ধান্ত হলো ভোট বর্জন। এটা উপেক্ষা করে দলের কেউ ভোট দিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সবমিলিয়ে এবারের ঘাম ঝড়ানো নির্বাচনে কপালে ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের। চায়ের দোকান আর যেখানে-সেখানে চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলছে কী হতে পারে, কারা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- এসব নিয়ে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ওয়াহিদ মুরাদ জানান, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত।’
তিনি আরো জানান, ‘কলারোয়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ২লাখ ১২হাজার ৪২৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৫হাজার ৮৪৪ জন, মহিলা ভোটার ১লাখ ৬হাজার ৫৮২জন, আর হিজড়া ভোটার ১জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৭৮টি। মোট বুথ তথা ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫২৩টি। এর মধ্যে স্থায়ী বুথ ৪৮৮টি ও অস্থায়ী ৩৫টি।’
কলারোয়াা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের থ্রেট নেই। কোন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রও নেই। সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সচেষ্ট আছে।’
আপনার মতামত লিখুন :