ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই গা-ঢাকা দেন বরগুনার তালতলীর ৭টি ইউপি’র ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দুই একজন সামনে এলেও প্রায়ই পলাতক থাকেন সব সময়। এ কারণে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের নৌকা প্রতীক নিয়ে এ উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের ৫টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত রাখেন। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে আত্মগোপনে যায় ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অধিকাংশ সদস্য।
তাদের মধ্যে ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনু আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিষদে মাসের পরে মাস ঘুরেও সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন ও ওয়ারিশ সনদ নিতে না পেরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের। প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কোনোমতে পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে নিয়মিত সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদে হাতপাখা নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ ও শারিকখালী ইউপিতে স্বতন্ত্র নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুক খান তাদের কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত আছেন ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বড়বগী ইউপিতে উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ আলমগীর মুন্সী, পচাঁকোড়ালিয়া ইউপিতে উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আ. রাজ্জাক হাওলাদার, নিশানবাড়িয়া ইউপিতে জেলা যুবলীগের সদস্য মো. বাচ্চু মিয়া ও কড়ইবাড়িয়া ইউপিতে উপজেলা আ.লীগের সাবেক সদস্য ইব্রাহিম সিকদার পনু নির্বাচিত হয়।
এইসব চেয়ারম্যানরা মাঝেমধ্যে ইউপিতে উপস্থিত থাকলেও বেশি সময় আত্মগোপনে থাকেন। অনেকের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। কেউ আবার নিজ বাসভবন থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। এতে বিপাকে পড়েছেন সেবাগ্রহিতারা। তারা বলছেন ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সনদ পত্র, গ্রাম আদালত, জন্ম ও মৃত্যুসনদসহ সকল সেবা পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সেবা না পেয়ে ফিরে আসছেন। এ নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে গেলে ঠিকমত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের পাওয়া যায় না। সেবা না নিয়েই ফিরে আসতে হয়। এভাবে আর কত দিন ভোগান্তি পোহাতে হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকন মামুন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় এইসব চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রভাব খাটিয়ে নাগরিক সেবা দেয়নি। বর্তমানে তারা আত্মগোপনে থাকার কারণে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই সব আওয়ামী চেয়ারম্যানদের অপসারণ চাই।
উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন আক্কাস মৃধা বলেন, নৌকা নিয়ে যে সব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তারা স্বৈরাচার হাসিনা’র দোসর। শেখ হাসিনার পতন হলেও এরা এখনো বহল তবিয়াতে রয়েছেন। তারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাদের দ্রুত অপসারণ করে জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির দাবি করছি সরকারের কাছে।
উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শহিদুল হক বলেন, নৌকা নিয়ে যে সকল চেয়ারম্যান হয়েছে তারা জনগনের সেবা দেয়নি। সকল সেবা ও ত্রাণ দলীয় লোকদের দিয়েছেন। এই সব চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হোক।
বড়বগী ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, ছোটবগী ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিক উজ্জামান তনু ও কড়ইবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম সিকদারের ফোনে একাধিকবার কল দিলে ফোন ধরেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :