চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় প্রকৃত আসামীকে ধরিয়ে দেয়ার নামে অন্য ৫ আসামীর কাছে ২ লাখ টাকা দাবির অভিযোগে এক ইউপি সদস্যকে আটক করেছে গ্রামবাসী। পরে তাকে উদ্ধার করে গোমস্তাপুর থানা পুলিশ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের পীরপুর দাখিল মাদরাসা মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের রতনপুর এলাকায় একটি খাল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় একই ইউনিয়নের পীরপুর আসানপুর গ্রামের মতিউর রহমান মতিকে। পরে একই দিন বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মতি। ময়নাতদন্ত শরীরে জখম ও হত্যাকান্ড বলে জানা যায়। এই ঘটনায় পরদিন গোমস্তাপুর থানায় এজাহার করেন তার স্ত্রী মোসা. সাথী বেগম। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ৫ আসামীকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় কারাগারে থাকা ৫ আসামী জামিনে মুক্ত হলে তাদেরকে হত্যাকান্ডের মূলহোতাকে ধরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাইনুল ইসলাম। বিনিময়ে ৫ আসামীর কাছে দাবি করেন ২ লাখ টাকা। এমনকি টাকা দেয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডের মূলহোতাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা না নিয়ে হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনা ও মূলহোতার পরিচয় প্রদান করতে নানারকম টালবাহানা করতে থাকে। এমনকি এনিয়ে একটি সালিসে বসলে সেখানে তিনদিনের মধ্যে আসামীর পরিচয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, মতিউর রহমান মতি হত্যাকান্ডে কারাগারে থাকা ৫ আসামী জামিনে বের হয়ে এসে মূলহোতার পরিচয় জানতে চাপ দিতে থাকে। তবে টাকা না দিলে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানায় ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম। এই ঘটনার সূত্র ধরেই শুক্রবার বিকেলে পীরপুর দাখিল মাদরাসায় কৌশলে মাইনুল ইসলামকে ডেকে আটক করে স্থানীয় বাসিন্দা ও অন্যান্য আসামীর লোকজন। পরে সেখানে উপস্থিত হন সাবেক ইউপি সদস্য মো. বাইরুল ইসলাম, বর্তমান ইউপি সদস্য আইনাল হক, মো. খলিলসহ কয়েকশ মানুষ।
পীরপুর দাখিল মাদরাসা মাঠে কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে জিজ্ঞেস করলে সকলের উপস্থিতিতে হত্যাকান্ডের মূলহোতাকে ধরিয়ে অন্য আসামীর খালাস করিয়ে দেয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা দাবির অভিযোগ স্বীকার করেন ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম। এছাড়াও মাইকে সকলের উপস্থিতিতে টাকা দাবির অডিও রেকর্ড শোনানো হলে তা নিজের বলে স্বীকার করেন তিনি। এসময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করে প্রকৃত হত্যাকারীর পরিচয় ও ঘটনার বর্ণনা জানতে চান ৫ আসামী ও তার পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাবেক ইউপি সদস্য মো. বাইরুল ইসলাম জানান, সকলের সামনে একটি অন্যতম এক আসামীর সাথে ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলামের টাকা দাবির অডিও রেকর্ড শোনানো হয়। শতাধিক মানুষের সামনে টাকা নিয়ে হত্যাকান্ডের আসামী ধরিয়ে দেয়ার কথা স্বীকারও করেন মাইনুল ইসলাম। তাই আসামীরা তাকে শুক্রবার বিকেলে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে পরিচয় জানতে চাই। এসময় ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম জানান, টাকার প্রয়োজন ছিল, তাই এমন মিথ্যা কথা বলেছিলেন তিনি।
মতিউর হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ইয়াসিন আলী পচু বলেন, আমরা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু চাচাতো ভাইকে হত্যার দায়ে কারাগারে ছিলাম। জামিনে আসার পর ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম আমাদেরকে প্রকৃত হত্যাকারীর পরিচয় কথা বলে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। পরবর্তী তার সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও টাকা না নিয়ে তা দিবেন না বলে জানান। তাই শুক্রবার বিকেলে আবারও তাকে এনিয়ে প্রশ্ন করলে স্থানীয় জনতা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়।
এদিকে, ইউপি সদস্যকে আটকে রাখারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় আসামী, তাদের পরিবারের লোকজন, স্থানীয় বাসিন্দাদের আদালতের মাধ্যমে আইনী কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দেন। গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, আগের একটি হত্যাকান্ডের ঘটনার জেরে ইউপি সদস্যকে আটকে রাখার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :