হেরোইন ইয়াবার একাধিক মামলার আসামী চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ দুই সদস্যের উপহার গ্রহণের ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে তীব্র সমালোচনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া দুটি ছবিতে দেখা যায়, ৪-৫টি মাদক মামলার আসামী চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী চরবাগডাঙ্গা এলাকার অন্যতম শীর্ষ হেরোইন কারবারি মিজানুর রহমান ওরফে মিজানের থেকে উপহার গ্রহণ করছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুর রহমান ও সিপাই মো. আরিফুল ইসলাম। লাল প্যাকেটে মোড়ানো উপহার নেয়ার ছবি তোলা হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজানের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান জেলা শহরের বিশ্বরোড এলাকায় এমজে ট্রেডার্সের একটি এসএস পাইপ ও স্টিলের ওয়ার্কসপে।
এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুর রহমানের সাথে তোলা ছবিতে পাশের চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় এক পুলিশ সদস্যকে। তবে সেই পুলিশ সদস্যের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছবি তোলার সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই আসাদুর রহমান ও সিপাই আরিফুল ইসলামের সাথে মাদক ব্যবসায়ী মিজানের ছবি তোলার সময় উভয়কেই ক্যামেরার দিকে তাকাতে দেখা যায়।
সমাজসেবক ফয়সাল আহমেদ জানান, ফেসবুকে ছবিটি আমিও দেখেছি। খুব অবাক হয়েছি। কিভাবে সম্ভব হতে পারে এমনটা? একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর হাত থেকে কিভাবে উপহার নিতে পারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। শুধু উপহার গ্রহণই নয়, পাশাপাশি ছবিও তুলেছেন স্বেচ্ছায়। কেউ কখনো বিকারগ্রস্ত না হলে এমনটা করতে পারে না। সেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুই সদস্যকে দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত।
কলেজ শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক নির্মূলের জন্য সরকারের বিশেষ একটি সংস্থা। অথচ তারাই যদি এমন গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হবে। কারন এই ছবি দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
এ নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার মাদক মামলার আসামী মিজানুর রহমান মিজানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একাধিকবার দুটি ফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাই আরিফুল ইসলাম।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (এসআই) মো. আসাদুর রহমান বলেন, মিজানুর রহমান মিজানের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এমজে ট্রেডার্সের একটি এসএস পাইপ ও স্টিলের ওয়ার্কসপ থেকে বাড়ির কিছু জিনিসপত্র কিনেছিলাম। এর সুবাদেই সেই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম সংবলিত একটি মগ উপহার দেয় আমাকে। তবে মিজানের নামে মাদক মামলা রয়েছে বা ছিল সেটি আমার জানা নেই।
কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনিছুর রহমান খাঁন। এমনকি অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে।
এবিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদার বলেন, এর আগে যখন জেলায় আমি কর্মরত ছিলাম, তখন মিজানের নামে আমি নিজেই হেরোইন ও ইয়াবার দুটি মামলা করেছিলাম। নৈতিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এমন উপহার গ্রহণ করতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। তার সাথে কথা না বলে মন্তব্য করা উচিত হবে না।
অনুসন্ধান জানা যায়, গত ১০ বছর ধরে হেরোইন চোরাচালানের সাথে জড়িত রয়েছে মিজান। তবে শুরুর দিকের কয়েক বছর দেশের এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর বহনকারী হিসেবে কাজ করেছে সে। পরবর্তীতে নিজেই সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক সংগ্রহ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার শুরু করে। বর্তমানে তার ৭-৮ জন বহনকারীসহ শক্তিশালী একটি চক্র একাজে নিয়োজিত রয়েছে। গত ২ বছর আগেও ২০২২ সালের নভেম্বরে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ হেরোইনসহ মিজানকে আটক করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবি পুলিশ। এই মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে। জামিনে মুক্ত থাকলেও যেকোন সময় হতে পারে মামলার রায়।
আপনার মতামত লিখুন :