ঝিনাইদহের বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়গুন নেছার বাড়ির পানির বিল এসেছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮৬৬ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ পানির বিল নিয়ে নিয়ে চোখে শর্ষের ফুল দেখছেন। কিভাবে এই সুদাসল পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। জয়গুন নেছা ঝিনাইদহ শহরের কলাবাগানপাড়ার শহীদ গোলাম নবী সড়কের হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। ২০১৯ সালে সরকার তাকে বীরঙ্গনা খেতাব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে জয়গুন নেছা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। তার যুবতী কন্যা ও স্বামীকে হানাদার বাহিনী তুলে নিয়ে হত্যা করে।
বৃদ্ধা জয়গুন নেছা জানান, তার বাড়িতে পয়েন্ট ৭৫ ব্যাসার্ধের পানি সরবরাহের লাইন রয়েছে। প্রতি মাসে তার বিল আসে ২৫০ টাকা। কতদিন আগে তার পানি সরবরাহের সংযোগ নিয়েছেন তার স্মরণ নেই। তবে ১৫ বছর হবে বলে তিনি জানান। সেই হিসাব ধরলে বছরে তার পানির বিলের পরিমাণ ৩ হাজার টাকা হয়। এখন ১৫ বছরে মোট বিল হয় ৪৫ হাজার টাকা। এদিকে ঝিনাইদহ পৌরসভার পানি সরবরাহ বিভাগ সুত্রে বলা হয়েছে জয়গুন নেছার মুল পানির বিল ৩০ হাজার ১২০ টাকা। বাকী টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে যে সুদ হয়ে সেটা বিলের সঙ্গে যোগ হয়ে এই বিপুল অংক দাড়িয়েছে।
ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন জানান, ২০১৭ সালে এটুআই প্রজেক্টর সফটওয়ারের আওতায় বিল প্রস্তুত করা হয়। সেখানে যেভাবে সফটওয়ার তৈরী হয়েছে তাতে জয়গুন নেছার মুল বিলের সঙ্গে প্রতি মাসে ৮১ হাজার ৫৫৩ টাকার সুদ যোগ হচ্ছে। বছর বছর সেটা আবার চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে।
তিনি বলেন, এটা পৌরসভার কোন ভুল নয়, বরং সফটওয়ারে চক্রবৃদ্ধি হারে যে সুদ হচ্ছে সেটাই তার পানির বিলে যোগ হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, জয়গুন নেছা ২০১৪ সাল থেকে পানির বিল দেন না। তিনি সুদ ও আসল মওকুফের আবেদন করলে ভেবে দেখা হবে। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়গুন নেছার বিল নিয়ে কোন অভিযোগ না থাকলেও তিনি জানান, পৌরসভায় গিয়ে তিনি পানির বিল মওকুফের জন্য কার কাছে যাবেন তা ভেবে পান না। ফলে এখানে সেখানে ঘুরে চলে আসেন। তিনি বলেন, সরকার প্রতি মাসে যে ভাতা দেন তার মধ্যে থেকে ঋণ বাবদ ১৪ হাজার টাকা কেটে নেয়। প্রতি মাসে পান মাত্র ৬ হাজার টাকা। এই অল্প টাকা দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ পানির বিল পরিশোধ করার মতো সাধ্য তার নেই।
আপনার মতামত লিখুন :