গ্রামগঞ্জে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে এবং তা প্রচার করে নামাজে জানাজা সময় সূচী জানান দেওয়াটা অনেকটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। আর এই প্রচারের কাজটি ১৮ বছর ধরে আন্তরিক ও নিরলস ভাবে করে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সদর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিক্সাচালক মো. ছালে মুছা।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় ও সবার পরিচিত মুখ ৪২ বছর বয়সী ছালে মুছা শোক সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছেন ২০০৬ সাল থেকে। তিনি আনুমানিক ৪ শত ৫০ জন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করে বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেছেন।
ছালে মুছা বলেন, আমি কখনও মাইক নিয়ে রিক্সায়, কখনও অটোরিকশা আবার কখনও বা সিএনজি করে মৃত্যু সংবাদ করে থাকি। মৃত ব্যক্তির শোকাহত পরিবারের কাছ থেকে শোক সংবাদ ও মৃত ব্যক্তির নাম পরিচয়, জানাযার স্থান, সময়সূচী প্রকাশের অনুরোধ পাওয়ার সাথে সাথে আমি যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, তা প্রচারের জন্য ছুটে যাই। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে নেই, না দিলে কোনো দাবি করি না।
বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোকবুল হোসেন বলেন, মুছা অনেক ভালো মানুষ। এলাকার প্রায় সবার মোবাইলে তার নম্বরটি সেইভ করা থাকে। কারণ, মৃত্যু তো আর বলে কয়ে আসে না। সে তার জীবনটা কাটিয়ে দিলো 'একটি শোক সংবাদ' প্রচার করতে করতে। এটাই তার স্বকীয়তা।
ছালে মুছার প্রতিবেশী শিক্ষক ও যুবদল নেতা আবু কালাম জানান, ছালে মুছা ব্যক্তি জীবনে কখনও রিক্সা চালনা, কখনও মঞ্চে উপস্থাপনা, কখনও নাটক, যাত্রাপালায় অভিনয় করে বহু কষ্টে জীবন যাপন করে। সুকন্ঠী ও অল্প শিক্ষিত মানুষটি অনেক পরোপকারী।
মৃত্যু সংবাদ প্রচারক ছালে মুছা জানান, আমি মাইকে যখন মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করি, তখন আমার মধ্যে অন্যরকম বেদনাদায়ক অনুভূতি অনুভব করি। কষ্ট লাগে যখন মৃত ব্যক্তি যদি অল্প বয়সের বা দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। আমি আমার এই মৃত্যু সংবাদ প্রচার আজীবন চালিয়ে যেতে চাই।
নিজে খুব একটা শিক্ষিত না হলেও তার ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে সবাইকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। ২ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে বড় মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। নিজের বলতে একটি ছোট টিনের ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই এই শোক সংবাদ প্রকাশকারী ছালে মুছার। এতে তার কোন দুঃখও নেই। তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করে সুস্থভাবে বাকি জীবন পার করতে চান।
আপনার মতামত লিখুন :