binodonerpadmaful
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

কালের স্বাক্ষী হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির


বিনোদনের পদ্মফুল | জি এম স্বপ্না, সলঙ্গা, সিরাজগঞ্জ  ডিসেম্বর ৪, ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম কালের স্বাক্ষী হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির

সিরাজগঞ্জে সলঙ্গায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে নবরত্ন মন্দির। প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। মূল মন্দিরের আয়তন ১৫ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। মন্দিরের নির্মাণ সময় সম্পর্কিত কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি। আনুমানিক ১৭০৪-১৭২৮ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনমলে রামনাথ নামক জমিদার মতান্তরে তশিলদার এই মন্দির নির্মাণ করেন।দুইপাশের ধান ক্ষেতের বুক চিড়ে সেখান থেকে ছোট্ট একটি  মেঠো পথ আঁকাবাঁকা এই পথের ধারেই পোড়ামাটির কাব্যে গাঁথা অনন্য এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। 
বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব হিন্দু মন্দির দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর অন্যতম একটি এই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। তিনতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনার ওপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। মূল মন্দিরের বারান্দায় ৭ টি ও ভেতরের দিকে ৫ টি প্রবেশপথ আছে। দ্বিতীয় তলায় কোনও বারান্দা নেই। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির তিন তলা বিশিষ্ট। এখানে আলাদা আলাদা কক্ষে ৯ টা বিগ্রহ রয়েছে। তাই নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। পুরো মন্দিরের বাইরের দিকে পোড়া মাটির অলঙ্করনে ঢাকা। এ সব অলঙ্করনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা দেব দেবীর মুর্তি, লতা পাতা ইত্যাদি। 
রামনাথ ভাদুড়ি দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের মতই এখানে একটি মন্দির তৈরি করেন। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশেপাশে আরও তিনটি ছোট মন্দির রয়েছে। নব রত্ন মন্দিরের উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির। পাশে দোচালা আকৃতির চন্ডি মন্দির এবং দক্ষিণ পাশে পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে শিব মন্দির। সবগুলো মন্দিরেরই বর্তমানে দেখভাল করছেন সরকারের প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তর। 
কালের বিবর্তণে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত। দেশ ভাগ ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের পুর্ব পুরুষেরা। যুগ যুগ ধরে কালের স্বাক্ষী হয়ে ঝোপঝাড় বুকে নিয়ে লুকিয়ে ছিল এই নবরত্ন মন্দির। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের প্রত্নতাত্বিক বিভাগ ঐতিহ্যের এই নিদর্শন খুঁজে বের করেন। 
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, মন্দিরেরর চারপাশের জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ধর্মীয় ভক্তবৃন্দের সুবিধাসহ এই মন্দিরটি আরও হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে একটি।
বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কেন্দ্রিয় কমিটির উপদেষ্টা এ্যাড. বিমল কুমার দাস জানান, ১৯৮৬ সালে যে সিএস রেকর্ড হয় তাতে মন্দিরটি দোল মন্দির নামে রেকর্ড হয়। যা আমাদের প্রতিবেশি ভারতে উদযাপিত হয় হোলি উৎসব হিসেবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ হতে নবরত্ন মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের পুরাতন মন্দিরটিকে দর্শনার্থীদের আকুষ্ট করতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Side banner