নারায়ণগঞ্জের ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালিগঞ্জ সড়ক নামে পরিচিত পরশি-মুড়াপাড়া জিসি ভায়া রূপগঞ্জ সড়ক ১৪ দশমিক ২৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ও লিংক রোড হিসেবে ফজুরবাড়ি থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার সড়ক মোট ১৮ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ধীরগতি থাকায় জনমানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। এলজিইডির এ প্রকল্পের বাঘবের থেকে ফজুরবাড়ি পর্যন্ত নির্মাণ কাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু মুশুরী থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত সড়কটি চলাচলে একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এ সড়কের হাবিবনগর, ভিংরাবো, ফজুরবাড়ি, নবগ্রাম, ইছাখালী এলাকার বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি এখন চরমে। তবে সড়ক নির্মাণে জমির জটিলতা, সড়কের মাঝখানে ৩০/৩২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায়, বাঘবের এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের জমির ক্ষতিপূরণ বিল না দেওয়া ও অতিবর্ষণে কাজের বিলম্ব হচ্ছে বলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে।
এ প্রকল্পে ১৮ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ২৪ ফুট প্রস্থ ও উভয়পাশে ৩ফুট করে ৬ফুট ফুটপাত সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৪টি ইউড্রেন নির্মাণ, ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বক্স ড্রেইন নির্মাণ, দুইটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ১২মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ সকল কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। এ সড়ক নির্মাণে ২০২৩ সালের ৭জুন ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড দায়িত্ব পায়। তারা একই বছর ২৯মে নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০২৪ সালের ২৮মে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। পরে জমির জটিলতা ও অতি বর্ষণসহ নানা প্রতিকূলতায় নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড় দিয়ে রাজধানীর ডেমরা থেকে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া, রূপগঞ্জ সদর ও দাউদপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়ক। উপজেলা কমপ্লেক্স, পুলিশের সেবায় রূপগঞ্জ থানা, প্রধান ডাকঘর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষ, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস, স্কুল-কলেজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে আসা যাওয়া করার অন্যতম এ সড়ক। অথচ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরুর আগে ঝুঁকির মধ্যে হলেও এ সড়কে চলাচল করা গেছে। বর্তমানে স্থানে স্থানে এমন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বৃষ্টি হলে আর গাড়িতে চলাচলা করা যায় না।
রাতের আঁধারে মালবাহী ভারী যান চলাচল করায় সড়কটির মুশুরী থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারে শত শত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। কোথাও হাঁটু সমান পানি আর কাঁদা মাটিতে পরিণত হয়। তখন যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সময় চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ সড়কের মুশুরী থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট গর্তে কোথাও হাঁটু সমান পানি, আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে থাকে। প্রতিদিনই হালকা পরিবহন উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে পথচারীরা চলাচল করতে পারছে না। পাকা রাস্তার মাঝখানে কাদার ছড়াছড়ি। তাতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। পাথরবাহী লরি ও মালবাহী ট্রাক অবাধে চলাচল করার কারণে সড়কের এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। এতে লোকজনের ভোগান্তিও চরমে উঠেছে।
জাঙ্গীর গ্রামের রিক্সাচালক তোতা মিয়া বলেন, এ সড়কে ইট, বালু ও পাথর বহন করায় সড়কটি নষ্ট হয়ে যায়।
বাঘবের গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী মুন্সি বলেন, সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো বাজারজাত করা যায় না। তাতে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে পরিবহন খরচ ও সময় বেশি লাগে। অনেকেই দশ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রূপগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী আব্দুর রফিক বলেন, ভারী যান চলাচল উপযোগী রাস্তা নির্মাণ হলে তা অবশ্যই টেকসই হবে। তবে ব্যবহারকারী স্থানীয় ইটভাটা মালিকদের ইটবহনকারী ট্রাক, ড্রামট্রাক ও লড়িসহ ভারী যানবাহনের মালিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হতে হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরশি থেকে রূপগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের জমি ভূমি হুকুমদখল করা হয়েছে। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বিল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাঘবের এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের জমির ক্ষতিপূরণ বিল দেওয়া হয়নি। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগে বৈষম্য দূর করে প্রত্যেক জমির মালিকদের বিল পরিশোধের দাবি জানান তিনি।
রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী বাছির উদ্দিন বলেন, সড়কটি মেরামত না করায় আমরা গতিহীন হয়ে পড়েছি। বহু আবেদন নিবেদন করেও এ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, এ সড়কে পাথরবাহী ও কলকারখানার পণ্যবাহী ভারী যান চলাচল করার কারণে সহজেই সড়কটি অযোগ্য হয়ে পড়ে। পাথরবাহী ভারী লরি ও ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। অথবা ভারী যান চলাচল করার উপযোগী করে সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রকৌশলী মোঃ মাহবুব আলম মাসুম বলেন, সময় একটু বেশি লাগলেও টেকসই ও মজবুত এ সড়ক নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সড়কের জমি হুকুম দখল করা হয়নি। তাই জমি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে সকল সমস্যার সমাধান করে শিগগিরই এ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
এলজিইডির নারায়ণগঞ্জ কনসালট্যান্ট প্রকৌশলী রিয়াদ খাঁন বলেন, এখন পর্যন্ত সড়কের ৫৩ ভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও সড়কের মাঝখানের ৩০/৩২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তর হলে আগামী দুই মাসেই বাকি ৪৭ভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব বলে তিনি দাবি করেছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মেহমুদ মোরশেদ উল আল-আমিন বলেন, শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড় এলাকার ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। নানা প্রতিকূলতায় নির্মাণ কাজের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ বলেন, নির্মাণাধীন এ সড়কের আবেদনকৃত সকল বৈদ্যুতিক খুঁটি ইতিমধ্যে সরানো হয়েছে। আরো কোন বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর প্রয়োজন হলে আবেদন করলে অবশ্যই তা সরানো হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিদর্শন করে এ সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক নির্মাণ দ্রুত গতিতে শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ডেমার-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :