বগুড়ার সোনাতলায় সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘর বিক্রির চলছে মহোৎসব। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার অসহায় দরিদ্র মানুষের বাসস্থানের কথা ভেবে সরকারের নিজস্ব জায়গায় সরকারি অর্থায়নে দুকক্ষ বিশিষ্ট ঘর সাথে টয়লেট রান্নাঘর টিউবওয়েলের ব্যবস্থা সহ ভূমিহীনদের নামে রেজিস্ট্রি ও নামজারি করে ঘরে উঠিয়ে দিয়েছে।
সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের নামাজখালী আবাসনে গেলে দেখা যায় অধিকাংশ ঘরই অপরিস্কার ঘরের সামনে আবর্জনার স্তূপে ভরা। নোংরা আবর্জনায় নষ্টের পথে ঘরগুলো। তবে কেউবা ঘর পেয়ে অদ্যাবধি দেখতেও আসেনি তাদের নামীয় বরাদ্দের ঘর। কেউবা এসে ঘর বুঝে নিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেছে। আবার এও চোখে পড়লো একই পরিবারের ৪ জনের নামে-বেনামে ঘর নিয়ে ঘরের চতুর্দিকে বেরা কেউবা এক ঘর পেয়ে পাশের ঘর জবর দখল করে চতুর্দিকে বেরা দিয়ে তালাবন্ধ করে রাখছে।
অভিযোগ আছে এতে করে আশপাশের লোকজনের চলাচলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আর প্রতিবাদ করলেই মিলে হুমকি। আবার কেউবা নিজ নামে ঘর না থাকায়ও পেশী শক্তির বলে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ঘর দখল করে আছে। তবে এসবের জন্য মাঝে মধ্যেই একে অপরের সঙ্গে হট্টগোল সহ ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। এ আবাসন যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে।
এসময় দেখা মিললো বাহার বেপারীর ছেলে দুলা বেপারীর সঙ্গে। তিনি চারটি ঘর একত্রিত ঘিরে রেখেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমার তিন ছেলের তিনটি সরকারি ঘর ও আমার নামে একটি ঘর চারটি ঘর ঘিরে নিয়েছি।
ছেলেদের ডাকতে বললে তিনি জানান, ছেলেরা ঢাকায় কোম্পানিতে চাকরি করে বছরে ঈদের ছুটিতে শুধু বাড়ি আসে।
এদিকে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান গায়ের জোরে বিত্তশালী অনেকেই সরকারি ভাবে পড়ে থাকা জায়গা জবরদখল করে নিয়ে আছে। আবার কেউবা নিজ নামে ঘর না পেয়ে পেশী শক্তির বলে পরে থাকা ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দখল করে আছে। যদিও এসব বিষয় প্রশাসনের নজরে দিলে উপজেলা প্রশাসন জানান, সমাজের অসহায় অবহেলিত দরিদ্র ও যাদের মাথা গোঁজার আশ্রয় টুকু নেই সেই সমস্ত লোকজনদের আশ্রয়ের কথা ভেবে সরকারি ভাবে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং জায়গা ঘর ও বৈদ্যুতিক সহ তাদের নামীয় রেজিস্ট্রি দলিল মুলে তাদেরকে ঘরে উঠিয়ে দিয়েছে সরকার।
এসব নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে তিন লাখের ঘর তিরিশ চল্লিশ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছে এসব মুনাফা লোভী মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ হাওয়ার পর বিভিন্ন ভাবে দালালদেরকে ১৫/২০ হাজার টাকা দিয়ে নেয়া হয় ঘর। তারা আরো জানান যাদের নিজ নামে জায়গা ও বসতবাড়ি আছে তারাও টাকার বিনিময়ে সরকারি ঘর বরাদ্দ নিয়েছে।
অনুসন্ধানকালে স্থানীয়দের কাছে ঘর বিক্রির একটি তালিকা পাওয়া যায়। তালিকা অনুযায়ী, সদর ইউনিয়নের স্ত্রী মালতী রানী, চরমধুপুরের খালেকের ছেলে দুলা মিয়া, নামাজখালী গ্রামের আনোয়ারা বেগম, সুজাইতপুর গ্রামের সাহিদা বেগম, চকনন্দন গ্রামের জনাব আলীর ছেলে মিঠু মিয়াা, রানীর পাড়া গ্রামের সামছুল মন্ডলের ছেলে সবুজ মিয়া, সুজাইতপুর গ্রামের আইয়ুব মিয়া সহ প্রায় ০৯/১০ জনের সরকারি পাওয়া ঘর বিক্রি করেছে স্বল্প মূল্যে। তবে সরকারি ঘর বিক্রেতা অনেকেরই ঠিকানায় গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। এসব ঘর কেনার ক্রেতা কিন্তু স্থানীয়ভাবে আবাসনে বসবাসরতরা। আবার এসব ঘর বিক্রেতার পাশের বসবাসরতরা ঘর কিনতে চাইলে বিক্রেতা তাদের না দিলে এ নিয়েও বাজে চরম হট্টগোল।
এ বিষয়ে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বেলাল জানান, আমি সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘর বিক্রির কথা শুনেছি এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কয়েকজন ঘর বিক্রেতার তালিকাও দিয়েছি।
সরকারি ঘর বিক্রি সহ সমস্ত বিষয় অবগত করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘর গ্রহিতারা কোন ভাবেই এই ঘর বিক্রি করতে পারেনা। আমি দ্রুত এ বিষয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করবো এবং আবাসন প্রকল্পের ঘর বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে এবং যারা ঘর পেয়েও থাকেনা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা সহ বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :