হাতে একজোড়া চুড়ি পরা যেন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতায় একটি বাক্য খুব প্রচলিত ছিল, বিবাহিত নারীরা চুড়ি না পরলে স্বামীর অমঙ্গল হয়। এসব কুসংস্কার হলেও বাঙালী নারীরা নিজেদের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিতেই বাক্যটি সত্য হিসেবেই মেনে নিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এমন নারী খুঁজে পাওয়া ভার যার হাতে একজোড়া চুরি নেই।
কিশোরী থেকে বৃদ্ধা সবার হাতেই চুড়ি। কিনে দে রেশমি চুড়ি, নইলে যাব বাপের বাড়ি, দিবি বলে কাল কাটালি, জানি তোর জারিজুড়ি... আশা ভোষলের গাওয়া জনপ্রিয় এই গানে স্রোতারা আজও বিমুগ্ধ। চুড়ি বা বালা যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বাঙালী নারীদের কাছে এর জনপ্রিয়তা যুগ থেকে যুগান্তর অবধি থাকবে। এটি নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। আর এই সৌন্দর্যের চুড়ি তৈরিতে রয়েছে শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম।
ঈদুল আযহা সামনে রেখে কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার নতুন বাজার (হাকিমদ্দিন রোড) চুড়ি তৈরির কারখানার শ্রমিকরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই কর্মব্যস্ততা। বসে নেই নারী শ্রমিকরা। পুরুষদের সাথে সমান তালে কাজ করে চলেছেন নারী শ্রমিকরা। বছরের দুটি ঈদকে কেন্দ্র করেই ৬ মাস চালু থাকে চুড়ি তৈরির কারখানাটি।
৪ বছর আগে কাচের চুড়ি তৈরির কারখানাটি গড়ে উঠে। এ কারখানাটির পাশাপাশি একই স্থানে গড়ে উঠেছে আরো একটি কারখানা। চুড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল হিসেবে কাঁচ ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া ভোলার কয়েকটি স্থান থেকেও এ চুড়ি তৈরিতে কাচ সংগ্রহ করা হয়। কারখানাগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বিশাল একটি চুল্লীতে আগুন জ্বালিয়ে এ কাচ গলানো হয়। পরে বিভিন্ন মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় কালো ও সাদা রংয়ের কাঁচের চুড়ি। সেগুলোকে ব্রুজ হিসেবে ঢাকায় বাজারজাত করা হয়। ঢাকায় নিয়ে এ চুড়িগুলোকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হয়। প্রথমে এ চুড়িগুলোকে জোড়া লাগানো এবং পরে বিভিন্ন রংয়ে রঙিন করে তোলা হয়। এরপর তা বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজারে বাজারজাত করা হয়।
এ কারখানাটিতে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ ব্রুজ চুড়ি তৈরি করা হয়। প্রতি ব্রুজ কাঁচের চুড়ি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে ১০-১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অন্য জেলা থেকে এসে কাজ করছেন। অন্য জেলা থেকে আসা কারিগররা চুড়ি তৈরির কাজের সাথে বহু বছর ধরে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন। এক শ্রমিক জানান, চুড়ি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। বাংলার নারীদের কাছে আহ্বান, তারা যেনো এই ঐতিহ্য ধরে রাখে। স্থানীয় লোকজন বলেন, স্থানীয়ভাবে কারখানাটি নির্মাণ হওয়ার কারনে স্থানীয় বেকার লোকজনের বেকারত্ব দূর হয়েছে। এখানকার পুরুষেরা বেশিরভাগ নদীতে কাজ করে। তাই সংসারের হাল ধরতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে ওই কারখানায় কাজ করে বাড়িতে আয় করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :