রাঙামাটি জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ। দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে যাত্রী সাধারণের নিরাপদ নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করণ, নৌ-পথ উন্নয়ন ও সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ১৩টি লঞ্চ ঘাট ও ১৩টি পল্টুন রয়েছে। উক্ত লঞ্চ ঘাট ও পন্টুন ব্যবহারের মাধ্যমে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ব্যবসায়িক প্রাণ কেন্দ্র রাঙামাটি সদর উপজেলা হতে ৯টি উপজেলায় প্রতিদিন নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নৌপথে পরিবহন হয়ে থাকে।
জানা যায়, রাঙামাটি সদর থেকে ৯টি উপজেলা যাত্রী সাধারণ লঞ্চে করে যাতায়াতসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল ও খাদ্য সামগ্রী পরিবহন করে থাকেন। যাত্রী সাধারণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল বিভিন্ন লঞ্চে করে পরিবহনের ক্ষেত্রে উক্ত ঘাট হতে পন্টুনে উঠা নামার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ হতে প্রতি বছর সিঁড়ি তক্তা সরবরাহ করার বিধান থাকলেও বিগত ৩ বছর যাবৎ উক্ত লঞ্চ ঘাট সমুহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিঁড়ি তক্তা সরবরাহ করা হয়নি। যেকারনে এসব লঞ্চ ঘাটে যাত্রী সাধারনের চলাচলে বিঘ্নিত ঘটছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিগত ৩ বছর আগে ঘাট হতে পন্টুনে উঠা নামার জন্য সরবরাহকৃত বর্তমানে সিঁড়ি তক্তা জরাজীর্ণ ও জোড়াতালি দিয়ে পন্টুনে উঠা-নামা করছেন চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ ও খাদ্য সামগ্রী মালামাল বহনকারী ব্যবসায়ীরা। এই জরাজীর্ণ সিঁড়ি তক্তা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাঙামাটি হতে বিভিন্ন উপজেলায় চলাচলকারী লঞ্চে আসা-যাওয়া করছেন হাজারো মানুষ।
বরকল, লংগদু, রাঙামাটি রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, বিলাইছড়ি ও সুভলং ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নিয়ন্ত্রণাধীন পন্টুনে অধিকাংশ সিঁড়ি তক্তা জরাজীর্ণ ও জোড়াতালীতে ব্যবহ্নত হচ্ছে। অধিকাংশ লঞ্চ ঘাটে সিঁড়ি তক্তা ভেঙ্গে গিয়ে ঝুঁকিতে পারাপার হচ্ছেন সাধারন শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ যাত্রী সাধারণেরা।
মাইনীর উদ্দেশ্য যাওয়া রহমত উল্লাহ, আজিম উদ্দিন নামে একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে সিএইচটি বার্তা প্রতিবেদক কে জানান, এখন বর্ষা মৌসুম। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া রাঙামাটি সহ কয়েকটি জেলায় বন্যা কবলিত হয়ে পুরো এলাকায় পানিবন্দিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। এই টানা ভারী বৃষ্টিতে বন্যার পানিতে বর্তমানে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদেও পানি থৈই থৈই করছে। হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে অধিকাংশ ঘাট পানিতে ডুবে গেছে। তাই ঘাট থেকে পন্টুনে উঠতে সিঁড়ি তক্তা না থাকায় নৌকা ও ছোট বোটের মাধ্যমে উঠতে হচ্ছে। নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে সাধারন যাত্রীরা ঝুঁকিতে পন্টুনে ও লঞ্চসহ বোটে উঠতে হচ্ছে। বিগত ৩ বছর আগে সরবরাহকৃত এই সিঁড়ি তক্তা জরাজীর্ণ ও জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহারের ফলে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ বন্যায় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিতে যাত্রী সাধারণ ও ব্যবসায়ীদের দূর্ভোগ ক্রমেই বেড়েই চলেছে। অতি সত্বর ঘাটগুলিতে পন্টুনে সিঁড়ি তক্তা স্থাপনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, যাত্রী সাধারনের ঘাট হতে পন্টুনে নিরাপদে উঠা-নামার সুবিধার্থে প্রতি বছর প্রতিটি লঞ্চ ঘাটে পন্টুনের সাথে কমপক্ষে ৩টি করে সিঁড়ি তক্তা সরবরাহসহ স্থাপন করার বিধান থাকলেও বিগত ৩ বছর ধরে সীমিত আকারে সরবরাহ করা হলেও যা পর্যাপ্ত নয়। এবং বিভিন্ন ঘাটে কোন ধরনের সিঁড়ি তক্তা এখনো পর্যন্ত সরবরাহ ও স্থাপন করেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ।
রাঙামাটি জেলার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এর নিয়ন্ত্রণাধীন ১০টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলায় প্রতিটি লঞ্চ ঘাট হতে পন্টুনের উঠা-নামার সুবিধার্থে সিঁড়ি তক্তা প্রতি বছর কমপক্ষে ৩টি করে সরবরাহ করার বিধান থাকলেও অনিয়ম ও দুর্ণীতির সম্পৃক্ততার কারনে নিদির্ষ্ট সময়ে সরবরাহ বর্হিভুত লংঘনের জন্য পন্টুনে সিঁড়ি তক্তা স্থাপন করা হয় না। যে কারণে সাধারণ যাত্রীরা ঘাট হতে পন্টুনে উঠানামায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এব্যাপারে প্রতিটি লঞ্চ ঘাটে পন্টুনে অতিসত্বর সিঁড়ি তক্তা সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :