দেবহাটায় ইছামতি নদীর বাঁধ রক্ষায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে। সোমবার (২৬ আগস্ট) উপজেলার ভাতশালা বিশ্বাস বাড়ি এলাকায় এক কাজে অংশ নেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি দেশ রক্ষায় স্ব উদ্যোগে জামায়াত-শিবির, সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আল ফেরদাউসের টিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন দরদি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের টিম মানবিক পরিবার, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও সর্বস্থরের মানুষ এ কাজে অংশ নেন। সকাল থেকে কেউ বস্তায় ইট ভর্তি করছেন, কেউ বালু ভর্তি করার কাজে ব্যস্থতা সময় পর করছে। আবার কেউ ইট ভর্তি বস্তা মাথায় করে নদীর পাড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এসব মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আমাদের টিম মানবিক পরিবারের নারী সদস্যরা স্যালাইন পানি বিতরণ করেন। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বল্লি পুতে বাঁধ রক্ষার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে জড়ো হয় কয়েকশ মানুষ। নদী পড়ে মানুষের উপস্থিতিতে গণশক্তিতে পরিণত হয়।
স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা বকুল হোসেন, শেখ মনিরুল ইসলাম, সরফারাজ জানান, বেশ কিছুদিন ধরে জানতে পারি যে ইছামতি নদীর ভাতশালা এলাকায় বাঁধের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে সরকারের পাশাপাশি আমরা নিজ উদ্যোগে এ কাজে এসেছি। আমরা দেশ ও এলাকার মানুষের জানমাল ও বাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাব।
উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা অলিউল রহমান জানান, দেশ রক্ষায় ৫টি ইউনিয়ন থেকে আমাদের জামায়াত ইসলামের ৫ শতাধিক মানুষ এখানে কাজ করছে। দেশের ক্রান্তিকাল সময় বসে না থেকে নদীর বাঁধ রক্ষায় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করছি। একই সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাদ্দের অর্থ সচ্ছতার ভিত্তিতে সঠিক ব্যবহার করে সে বিষয় তাদের সাথে কথা বলেছি। পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে শুধু স্বেচ্ছাশ্রম নয় সাথে কয়েক হাজার ইটের ব্যবস্থা করেছি। বাঁধ রক্ষা শেষ না পর্যন্ত আমাদের সদস্যরা কাজ করে যাবে। দেশের মানুষের কল্যাণে বিশেষ করে সনাতন সহ অন্য ধর্মের অমুসলিম মানুষদের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।
দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল জানান, সর্বস্থরের মানুষের অংশ গ্রহণে বাঁধ নির্মানের কাজটি খুবই ভাল উদ্যোগ। এভাবে দেশের মানুষ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালে আমরা অতি দ্রুত বাংলাদেশকে পালটে দিয়ে উন্নত দেশে রূপান্তিত করতে পারবো। আমরা আশা করছি সর্বস্থরের মানুষের অংশগ্রহণে নির্মানকৃত বাঁধটি এবার ভাঙন থেকে রক্ষা করবে এবং আগামীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সদ্য বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আল ফেরদাউস আলফা জানান, আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার জায়গা থেকে নদী ভাঙন রোধে একটি শ্রমিক টিম নিয়ে এসেছি। সাথে ৪ হাজার ইট নিয়ে এসেছি, ভাঙন কবলিত স্থানে ফেলে বাঁধ রক্ষার জন্য।
এদিকে, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ অফিসার, নির্বাহী প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন পর্যয়ের কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা অলিউল রহমান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী আলহাজ্ব মাহাবুবুল আলম, জেলার অন্যতম সদস্য এম আসাদুজ্জামান মুকুল, উপজেলা নায়েবী আমীর মহিউদ্দীন মাহমুদ, উপজেলা জামাতের সেক্রেটারী মাওলানা এইচ এম ইমদাদুল হক, উপজেলা বায়তুলমাল সম্পাদক সোলাইমান হোসেন, কুলিয়া ইউনিয়ন আমীর মাওলানা আনারুল ইসলাম, পারুলিয়া ইউনিয়ন আমীর (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আবু ইউসুফ, সখিপুর ইউনিয়ন আমীর মাওলানা ইয়াকুব আলী, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আমীর মাহাবুব আলম, দেবহাটা ইউনিয়ন আমীর আবুল হোসেন, উপজেলা ইউনিট সদস্য মাসুম খান চৌধুরী সহ বিভিন্ন বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবন্দরা।
পরে সর্বস্তরের মানুষের এই কর্মসূচিকে সমার্থন জানিয়ে কন্ঠ শিল্পী শরিফুজ্জামান সোহাগ নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে পানি, বিস্কুট সরবাহ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :