লালমনিরহাটে মানুষের অর্থকরী ফসলের মধ্যে শাকসবজি অন্যতম। সারা বছরই বিভিন্ন সবজির আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ জেলার কৃষকরা। এবছরেও ব্যাপক পরিমাণে সবজির চাষ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত শাক সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে সবজির বাজার দর অনেকটাই কম। উৎপাদিত সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। শ্রমিকসহ বাজারে সবজি পরিবহন খরচের টাকাও উঠছে না বিক্রি করে। ক্রেতা কম থাকায় অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হচ্ছে জমিতেই।
চাষিরা বলছেন, বাজারে দাম কম, পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আসছেনা। জমিতে নষ্ট হচ্ছে বাঁধাকপি ও ফুলকপি।
কৃষি বিভাগ বলছেন, লালমনিরহাট সহ সারা দেশে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠাতে সবজি বাজার কমে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় চলতি মৌসুমে শাকসবজি উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০শ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যেই ৫ হাজার ৮০০শ হেক্টর জমির শাক সবজির চাষ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে পাতাকপি ও ফুলকপি প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। বর্তমানে সবজি মাঠগুলোতে রয়েছে করলা, টমেটো, চিচিঙ্গা, বেগুন, ঢেঁড়স, আলু, কুমড়া সহ নানান রকমের পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি।
লালমনিরহাট সদরের বেশকয়েকটি শাকসবজি পাইকারি বাজারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজার এখন বাঁধাকপি ও ফুলকপিতে ভরা। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে কৃষকদের আশা সবজির তুলনায় ক্রেতা কম। এতে অধিকাংশ কাঁচামাল নষ্ট হয়ে লোকসানে চাষীরা।
লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ী বাজারের কয়েকজন খুচরা দোকানদার জানান, বাজারে সবজির দাম কমেছে, ক্রেতার সংখ্যাও কমেছে। এতে পাইকারদের কাছ থেকে নিয়ে আসা সবজি বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আমার লোকসানে ভুগছি।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের ফুলকপি চাষি হারুন হোসেন (৪৫) বলেন, অনেক আশা নিয়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষাবাদ করেছিলাম। আমার সবজি মাঠে ফলনও মোটামুটি অনেক ভালো হয়েছে। একেকটি কপির ওজন হয়েছে দেড় থেকে দুই কেজি। সবজি মাঠের প্রায় ৪০ ভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে। বাকি সবজির তেমন মূল্য না থাকায় বিক্রি করতে পারিনি। পড়ে আজকে কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাজারে ৫-৬ টাকা পিচ বিক্রি করতে হচ্ছে।
একই এলাকার সবজি চাষি হবি মিয়া (৫০) বলেন, একবিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই বিঘা জমির ফুলকপি বিক্রি হচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সবজি বিক্রি করে হতাশা ছাড়া আর কিছুই জুটতেছে না। এখন ঘর থেকে শ্রমিক খরচ দিতে হচ্ছে। সার ও কীটনাশকের দোকান থেকে ধার দেনা করে আবাদ করছি। বিক্রির পর দেনা পরিশোধ করবো। কিন্তু সে আশায় ভাটা পড়েছে।
কৃষক মাইদুল ইসলাম (৩৮) বলেন, সবজির মধ্যে বাঁধাকপি কয়েক সপ্তাহ রাখা গেলেও ফুলকপি বিক্রির উপযোগী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে হয়। না হলে ফুল ফুটে গেলে বিক্রির অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আমার ২ বিঘা জমির সবগুলো বিক্রি করতে না পেড়ায় অধিকাংশ জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন বলেন, প্রতিবছর এ মৌসুমে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদন হয়ে থাকে।
বর্তমান বাজারে সব ধরনের সবজির যোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমে এসেছে ফুলকপি ও বাঁধাকপির।
তিনি আরো বলেন, আমরা কৃষকদের আগাম সবজি চাষের জন্য পরামর্শ দেই। তাতে কৃষকেরা লাভবান হন। আর ভরা মৌসুমে সবাই একসাথে সবজি চাষ করলে বাজারে ব্যাপক সবজির আমদানি হয়। ফলে দাম একটু কমে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :