কৃষি বিভাগের কোনরকম সাহায্য সহযোগিতা ও পরামর্শ ছাড়া কলমি শাকের বীজ উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। স্বল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় বিগত বছরগুলোতে কলমি বীজ উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে জেলার অধিকাংশ এলাকায়।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল অবধি জেলার রায়পুর, দফরপুর, গোভীপুর, হরিরামপুর, ইসলামনগর, আমঝুপি, হিজুলী, ঢেপা, পাঙ্গাশীপাড়া, চিৎলা, বাহাগুন্দা, জুগিন্দা ও গাঁড়াডোবসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ব্যাপক হারে কলমি চাষ পরিলক্ষিত হয়। শাক বিক্রি নয় বরং বীজ উৎপাদনের জন্যই এসব চাষ করেছেন কৃষকরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার হিজুলী গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, বিঘা প্রতি জমিতে কলমি বীজ উৎপাদনে বপন থেকে মাড়াই অবধি ৫/৭ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে বীজ উৎপাদন হয় ৮/ ১০ মণ। যা বিক্রি করা হয় ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মণ দরে।
গাংনী উপজেলার ঢেপা-পাঙ্গাশীপাড়ার কৃষক শাহাদাত হোসেন জানান, গত ২৪ বছর ধরে কলমি বীজ উৎপাদন করে আসছি। বিঘা প্রতি জমিতে কলমি বীজ উৎপাদনে খরচ হয় ৪/৫ হাজার টাকা। যা মাড়াই শেষে ৫০/৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে।
তিনি জানান, সর্ব প্রথম মেহেরপুরের রায়পুর থেকে কোন এক আত্মীয়ের বাসা থেকে এ বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করেন ঢেপা গ্রামের জনৈক ব্যক্তি। পরে তা লাভজনক হওয়ায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা বৃদ্ধি পেয়ে এখন গ্রামে প্রায় ৪'শ থেকে ৫'শ বিঘা জমিতে কলমির আবাদ রয়েছে। তিনিও ৪ বিঘা জমিতে কলমির চাষ করেছেন।
তিনি জানান, স্বল্প খরচে বেশি লাভ এবং অন্যান্য ফসল অপেক্ষা লাভজনক হওয়ার কারণেই গ্রামের অধিকাংশ কৃষক এখন কলমি আবাদ করে থাকে। কলমির গাছ মাড়াই শেষে উচ্ছিষ্ট অংশ গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
একই গ্রামের আব্দুল করিম জানান, চলতি বছরে প্রায় দেড় বিঘা জমিতে কলমির চাষ করেছেন। হালকা কিছু সার আর ২/৩ টি সেচ কাজ হলেই এ চাষে ভাল ফলন পাওয়া যায়। সময় মতো গাছ কর্তন করে মাস খানেক শুকানোর পর মাড়াই করা হয়ে থাকে। বেচা বিক্রির তেমন ঝামেলা নেই। বীজ উৎপাদনের পর স্থানীয় ব্যাপারীরাই এ বীজ ভালো দাম দিয়ে কিনে থাকেন।
আরেকজন কৃষক জিল্লুর রহমান জানান, ৪/৫ মাস পরেই কলমি কর্তন করা যায়। এছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি ও ২ কেজি দস্তা সারসহ কয়েকটি সেচ কাজের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া কর্তন করতে ৪ জন শ্রমিক এবং মাড়াই করতে দেড় হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এ বীজ উৎপাদন খুবই লাভজনক, বিঘা প্রতি জমিতে তিনি সর্বোচ্চ ১০ মণ ১৩ কেজি পর্যন্ত ফলন পেয়েছেন।
ঢেপা গ্রামের রুস্তম আলী জানান, এ চাষ ভুট্টা কিংবা অন্যান্য ফসলের মতো নয়। এ চাষ করতে হলে তাক থাকতে হবে। এর অর্থ খুব যত্ন ও চিন্তা ভাবনা করে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগে একটু কম কিংবা বেশি হলে ফলনে বিপর্যয় ঘটবে। তিনি ১০/১২ বছর ধরে এ আবাদ করে আসছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কোনরকম সাহায্য সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ না দেওয়া হলেও আবাদ করতে করতে তিনি এখন অভিজ্ঞ হয়ে গেছেন বলে জানান। যার কারণে কলমি বীজ উৎপাদনে কৃষি বিভাগের কোনরকম পরামর্শ তিনার প্রয়োজন হয়না।
একই গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, ভাদ্র মাসের ১৫ থেকে আশ্বিন মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত কলমি লাগাতে হয়। এর পূর্বে আষাঢ়-শ্রাবণে চারা দিতে হয়। পরে মাঘ মাসে কর্তন করতে হয়। পরে মাড়াই করে বীজ সংগ্রহ করতে হয়।
জেলার একাধিক কৃষক জানান, কলমি বীজ উৎপাদন খুবই লাভজনক। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে জেলায় আরো বৃদ্ধি পেতে পারে এ চাষ।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় ১৬ হেক্টর জমিতে কলমি চাষ হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :