মেহেরপুরে বিদেশি কমলার চাহিদা পূরণে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশি মাল্টা চাষ। ২০১৩ সালে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রথম চাষ শুরু হয় দেশি মাল্টার। পরবর্তীতে মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও শুরু হয় মাল্টা চাষ এবং তা প্রসারিত হতে থাকে।
গত কয়েকদিন ধরে মেহেরপুর জেলার আমঝুপি, গোপালপুর, টেংগারমাঠ, সহড়াতলা, সাহারবাটী, ভাটপাড়া, মোনাখালী, হাড়িয়াদহ, কুতুবপুর, আজান, জুগিন্দা, লক্ষীনারায়ণপুর ও মাইলমারীসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে চোখে মেলে অসংখ্য ছোট-বড় মাল্টা বাগান। যেসব বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় দুলছে শুধু মাল্টা আর মাল্টা। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। আর এ দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মাল্টা বাগানে এসে থাকেন।
জেলায় প্রথম দিকে মাল্টা চাষ স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও এখন তা ব্যাপকভাবে চাষের পরিকল্পনা নিয়ে কমলা, মাল্টা ও বাতাবি লেবুর বাগান করে চাষ করছেন অনেকে। ফলন যেমন ভালো হচ্ছে, তেমনি আশানুরুপ লাভও হচ্ছে। যা দেখে এ এলাকার অনেক কৃষক ও বেকার যুবকরাও এ বাগান করার উদ্যাগে নিয়েছেন। ফলের স্বাদ ঠিক অন্যান্য অঞ্চলের ফল গুলোর মতই সুস্বাদু ও রসালো। তবে দেশে উৎপাদিত মাল্টার মধ্যে পিরোজপুরের পর মেহেরপুরের মাল্টা সুস্বাদু বেশি বলে জানালেন বরিশাল থেকে মাল্টা ক্রয় করতে আসা ব্যবসায়ী সবুজ শাহ।
তিনি জানান, মেহেরপুরের মাল্টা স্বাদ ও গুনে ভালো হওয়ায় এখন বরিশালের বাজারে চাহিদা বেড়েছে এখানকার মাল্টার। ক'দিন পূর্বে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থেকে মাল্টা কিনলেও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এখন প্রতিদিন ২'শ-২'শ ৫০ ক্যারেট মাল্টা মেহেরপুর থেকে বরিশাল ফলের বাজারে আমদানি করে থাকেন তিনি।
সরেজমিনে মেহেরপুর সদর উপজেলার টেংগারমাঠ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মেহেরপুর শহরের ডাবলু মিয়া তিনার ৪০ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। যে বাগানের উৎপাদিত ফল বিক্রি করা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকায়।
এ বাগানের মাল্টা ক্রয় করা গাংনী উপজেলার নওপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মিকারুল জানান, ২০ লক্ষ টাকায় বাগানের ফল কিনে এপর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করা হয়েছে। যেখান থেকে আরো ৬ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন।
আজান গ্রামের ফল ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম গোলাপ জানান, তিনি মূলতঃ যশোর এলাকায় মাল্টা বিক্রি করে থাকেন। সেখানেও মেহেরপুরের মাল্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ থাকা সত্বেও মেহেরপুরের বাগান মালিকরা মাল্টা বিক্রি করে আশানুরূপ মূল্য পেয়েছেন। তবে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হলে আমের মতো দেশে মাল্টা চাহিদা পূরণে মেহেরপুর হতে পারে খ্যাতি সম্পন্ন এলাকা।
গোপালপুর গ্রামে মাল্টা ক্রেতা আরেক ব্যবসায়ী জানান, মেহেরপুরের চাহিদা মিটিয়ে মাল্টা এখন রাজধানী ঢাকাাসহ পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, বরিশাল, ফেনী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।
মেহেরপুর থেকে ১৬'শ-১৭'শ টাকা মণ কিনে তা ২ হাজার-২১'শ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হয়ে থাকে। যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১'শ-১'শ ২০ টাকা কেজি দরে। যেখানে বিদেশি মাল্টা ও কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩'শ-৪'শ টাকায়।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য), শায়খুল ইসলাম জানান, মেহেরপুর জেলায় ৭৬ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬ শতাধিক ছোট-বড় মাল্টার বাগান রয়েছে। এরমধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, মুজিবনগর উপজেলায় ২৬ হেক্টর এবং গাংনী উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে।
তিনি জানান, মাল্টা/লেবু জাতীয় ফল অল্প খরচে চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছে। এজন্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাল্টা চাষের সংখ্যা। এক সময় মেহেরপুরের মালটা চাষীরা দেশের অর্থনৈতিক বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :