যারা পুলিশের গায়ে হাত দিচ্ছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে মাদরাসার ছাত্র, ছাত্রদল, যুবদল ও জামায়াত-শিবিরের লোক ঢুকে গেছে। তারা পুলিশের গায়ে হাত দিচ্ছে, ভাঙচুর করছে। তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। তবে আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি, এটা দুর্বলতা নয়। আমাদের ধৈর্যকে যারা দুর্বলতা মনে করছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আমি অনুরোধ করছি আপনারা ঘরে ফিরে যান।’
এ সময় আন্দোলনকারীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান ডিবিপ্রধান।
এদিকে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আজ (বৃহস্পতিবার) এখন পর্যন্ত ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল (বুধবার) ছয়জনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে দুই দিনে সংঘর্ষে ১৭ জনের মৃত্যু হলো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন।
টাকা কয়েকদিন আন্দোলনের পর গত ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। পরেরদিন হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ।
এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। তবে শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে সংসদে আইন পাস না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আপনার মতামত লিখুন :